27%
ছাড়

বেলা ফুরাবার আগে

245.00

 

বেলা ফুরাবার আগে

কিরজেইডা রড্রিগেজ। পৃথিবীর বিখ্যাত একজন ফ্যাশন ডিজাইনার, ফ্যাশন ব্লগার এবং সেলিব্রিটি লেখকের নাম। অর্থ-কড়ি, বিত্ত-বৈভব কিংবা যশ-খ্যাতি- একজীবনে ‘অপ্রাপ্তি’ বলে সম্ভবত কোনো কিছুই নেই তার ঝুলিতে। দুনিয়াকে হাতের মুঠোয় পুরে ফেলা রড্রিগেজ খুব সম্প্রতি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুর আগে লিখে যান কিছু শেষ অনুভূতি। সেই অনুভূতিতে উঠে আসে কিছু টলটলে সত্য। এমন অকপট স্বীকারোক্তি রঙিন কর্পোরেট দুনিয়া আমাদের কখনোই জানাবে না। রড্রিগেজ লিখেছেন—

‘পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ডের গাড়িটি পড়ে আছে আমার গ্যারেজে। কিন্তু আমাকে বসে থাকতে হয় হুইল চেয়ারের হাতল ধরে। সবচেয়ে উন্নতমানের কাপড়, জুতো এবং দামি জিনিসে ভরপুর আমার বাসা। অথচ হাসপাতাল থেকে দেওয়া খুব সামান্য একটি চাদর ছাড়া আর কিছুই আমি আর গায়ে তুলতে পারি না। আমার টাকায় ব্যাংকগুলো ভরতি, কিন্তু কী আশ্চর্য! সেই টাকা আমার আর কোনো কাজে আসছে না। আমার বাড়িটা দেখতে প্রাসাদের মতো, কিন্তু আমাকে শুয়ে থাকতে হচ্ছে হাসপাতালের খুব ছোট্ট একটা বেডে। এক ফাইভ স্টার হোটেল থেকে অন্য ফাইভ স্টার হোটেলে আমি বিচরণ করে বেড়াতাম। কিন্তু হায়! এখন আমার সময় কাটে হাসপাতালের এক পরীক্ষাগার থেকে অন্য পরীক্ষাগারে। কত হাজার হাজার মানুষকে আমি অটোগ্রাফ দিয়ে বেড়িয়েছি। আর আজ ডাক্তারের লেখা প্রেসক্রিপশনটাই আমার জন্য পরম অটোগ্রাফ! নিজের ব্যক্তিগত জেট প্লেনে চেপে যেখানে ইচ্ছা সেখানে আমি উড়ে চলে যেতাম। কিন্তু আজ হাসপাতালের বারান্দায় যেতেও আমার দুজন লোকের সাহায্য দরকার হয়। কত স্বাদের, কত পদের আহারে ভরতি পৃথিবী। অথচ, দিনে দুটো পিল আর রাতে কয়েক ফোঁটা স্যালাইন ছাড়া এখন আর কিছুই খেতে পারি না। আমার চুলের যত্নে সাতজন বিউটিশিয়ান নিয়োজিত ছিল। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! আজ আমার মাথায় কোনো চুলই আর অবশিষ্ট নেই। এই যে বিশাল বাড়ি, গাড়ি, দামি আসবাবপত্র, ব্যাংক-ব্যালেন্স, জেট এবং ঈর্ষণীয় যশ-খ্যাতি, এগুলো আমার আর কোনো কাজেই আসছে না। এগুলো আজ আমাকে দিতে পারছে না কিছুই।’

অর্থকড়ি উপার্জনের জন্য যে মানুষটা নিজের গোটা জীবনটাই ব্যয় করল, জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে সেই টাকা, সেই অর্থ তার কোনো কাজেই আর লাগছিল না। সবচেয়ে দামি পোশাক গায়ে দিয়ে যে মানুষ চষে বেড়াত পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত, সময়ের পরিক্রমায় হাসপাতালের দেওয়া রঙিন একটা চাদর ব্যতীত আর কোনো কিছুই সে গায়ে তুলতে পারছে না! দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি কিংবা ওড়ার জন্য আধুনিক মানের জেট না হলে যার চলতই না, সে কিনা বন্দি হয়ে পড়ে হুইল চেয়ারের শিকলে! জীবন কতটা প্রবঞ্চনাময়, কতটাই ঠুনকো, তাই না? জীবন আসলে একটা মরীচিকার নাম যেখানে মৃত্যুই হলো ধ্রুব সত্য। দুনিয়ার জীবন বিশাল একটা নাট্যমঞ্চের ক্ষুদ্র একটা অংশ মাত্র। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, ‘এই দুনিয়ার উপমা হলো এমন এক মুসাফিরের মতো, যে তার ভ্রমণে বের হয়েছে। পথিমধ্যে ক্লান্ত লাগছিল বলে সে একটা গাছের ছায়ায় একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার পথচলা আরম্ভ করেছে।’ [জামি তিরমিযি : ২৩৭৭]

‘বেলা ফুরাবার আগে’ বই থেকে নেওয়া

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “বেলা ফুরাবার আগে”

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top