ফ্ল্যাপে লেখা কথা
কোনো কোনো রাতে অপূর্ব জোছনা হয়। সারা ঘর নরম আলোয় ভাসতে থাকে। ভাবি, একা একা বেড়ালে বেশ হতো। আবার চাদর মুড়ি দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলি। যেন বাইরের উথাল পাথাল চাঁদের আলোর সঙ্গে আমার কোনো যোগ নেই।
মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে। একঘেয়ে কান্নার সুরের মতো সে শব্দ।
আমি কান পেতে শুনি। বাতাসে জাম গাছের পাতার সর সর শব্দ হয়। সব মিলিয়ে হৃদয় হা হা করে উঠে। আদিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতায় কী বিপুল বিষন্নতাই না অনুভব করি।
জানালার ওপাশের অন্ধকার থেকে আমার সঙ্গীরা আমায় ডাকে। একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিঃসঙ্গতায় ডুবছি।
ভূমিকাঃ
সোমেন চন্দের লেখা অসাধারণ ছোটগল্প ‘ইদুর’ পড়ার পরই নিম্নমধ্যবিত্তদের নিয়ে গল্প লেখার একটা সুতীব্র ইচ্ছা হয়। ‘নন্দিত নরকে’ ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ও ‘মনসুবিজন’ নামে তিনটি আলাদা গল্প প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লিখে ফেলি। নিজের উপর বিশ্বাসের অভাবের জন্যেই লেখাগুলি দীর্ঘদিন আড়ালে পড়ে থাকে। যাই হোক, জনাব আহমদ ছফা ও বন্ধু রফিক কায়সারের আগ্রহে ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশিত হয় মাস ছয়েক আগে। এবারে প্রকাশিত হলো ‘শঙ্খনীল কারাগার’।
‘নন্দিত নরকে’র সঙ্গে এই গল্পের কোনো মিল নেই। দু’টি গল্পই উত্তম পুরুষে বলা এবং নিম্নমধ্যবিত্তের গল্প, এই মিলটুকু ছাড়া। নামধাম দু’টি বইতেই প্রায় একই রেখেছি। প্রথমত নতুন নাম খুঁজে পাই নি বলে, দ্বিতীয়ত, এই নামগুলির প্রতি আমি ভয়ানক দুর্বল বলে। কার্যকারণ ছাড়াই যেমন কারো কারো কিছু কিছু দুর্বলতা থাকে, এও সেরকম।
আন্তরিক চেষ্টা থাকা সত্ত্বের কিছু কিছু ছাপার ভুল রয়ে গেছে। ভুল গুলি অন্যমনস্ক পাঠকের চোখ এড়িয়ে যাবে, এইটুকুই যা ক্ষীণ আশা।
হুমায়ুন আহমেদ
বৈশাখ, ১৩৮০
Reviews
There are no reviews yet.